Pages

শুক্রবার, ১৯ মে, ২০১৭

ফরয নামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত করা সুন্নাত

ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করা সুন্নাত। এ ‘মুনাজাত’ নির্ভরযোগ্য হাদীস, ফতোয়া ও ইমামগণের বাণী দ্বারা প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি আয়াত, হাদীস ও ইমামগণের বাণী নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
আয়াত:
আমার বান্দারা যখন আপনার কাছে জিজ্ঞাসা করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা দোয়া করে, তাদের দোয়া কবুল করি যখন আমার কাছে দোয়া করে। (সূরা বাকারা: ১৮৬)
আয়াত:
আপনাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া করো আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো। যারা আমার এবাদতে (অর্থাৎ দোয়ার ক্ষেত্রে) অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে। (সূরা মুমিন: ৬০)
হাদীস: [ফরয নামাযের পর মুনাজাত]
হযরত আবূ উমামা (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন সময়ে দুয়া কবুল হওয়ার বেশী সম্ভাবনা? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, ‘শেষ রাতে এবং ফরয নামাযের পরে।’ [তিরমিযী শরীফ ২:১৮৭, হাদীস নং ৩৪২১]
হাদীস: [ফরয নামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত]
হযরত মুহাম্মাদ ইবনে আবু ইয়াহইয়া (রহ.) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) দেখলাম যে তিনি একজন নামাজীকে দেখলেন, সে নামাজ শেষ করার আগেই হাত তুলে দোয়া করছেন। তখন তিনি তাকে বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজ শেষ হওয়ার আগে হাত তুলে দোয়া করতেন না। (মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১৬৯)
হাদীস: [ফরয নামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত]
হযরত জাবের ইবনে ইয়াযিদ আল আসওয়াদাল আমেরী (রা) তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ফজরের নামাজ পড়লাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফিরিয়ে ঘুরে বসলেন এবং দুই হাত তুলে দোয়া করলেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: ১/৩৩৭)
হাদীস: [ফরয নামাযের পর মুনাজাত]
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন তুমি ফরয নামায হতে ফারেগ হবে, তখন দোয়ায় মশগুল হয়ে যাবে।’ [তাফসীরে ইবনে আব্বাস রা:]
হাদীস: [ফরয নামাযের পর মুনাজাত]
হযরত কাতাদাহ, যাহ্হাক ও কালবী (রহ:) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন, ফরয নামায সম্পন্ন করার পর দোয়ায় মশগুল হবে। [তাফসীরে মাযহারী]
হাদীস: [নামাযের পর মুনাজাতে হাত উঠানো]
হযরত ফযল ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নামায দুই রাকাত; প্রত্যেক দুই রাকাতে আত্ত্যাহিয়্যাতু পাঠ করতে হয়। ভয়-ভক্তি সহকারে কাতরতা ও বিনীতভাবে নামায আদায় করতে হয়। আর (নামায শেষে) দুই হাত তুলবে এভাবে যে, উভয় হাত আল্লাহ তাআলার দিকে উঠাবে এবং চেহারা কিবলামুখী করবে। অতপর বলবে, হে আল্লাহ! হে আল্লাহ ! (এভাবে দোয়া করবে।) যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, সে অসম্পূর্ণ নামাযী। [তিরমিযী শরীফ, ১৮৭, হাদীস নং ৩৫১]
হাদীস: [মুনাজাতে হাত উঠানো]
হযরত সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বড় দয়ালু দাতা। যখন বান্দা তাঁর কাছে দোয়ায় হাত উঠায় তখন তিনি তা খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। [তিরমিযী শরীফ, ২/১৯৫, হাদীস নং-৩৪৭৯]
হাদীস: [ইমাম-মুক্তাদীর মুনাজাত]
হযরত সাওবান (রা:) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তির জন্য উচিত নয় অন্য কারোর ঘরের ভিতরে তাকানো তাদের থেকে অনুমতি নেওয়ার আগে। যদি সে (অনুমতি নেওয়ার আগে) তাকায় তাহলে সে খেয়ানত করলো। কোন ব্যক্তি লোকদের ইমাম হয়ে এমন হবে না যে, সে তাদেরকে বাদ দিয়ে দোয়াতে শুধু নিজের জন্যই দোয়া করবে। যদি এরূপ করে, তাহলে সে তাদের সাথে খেয়ানত করল।’ [তিরমিযী শরীফ ১:৮২, হাদীস নং ৩২৫]
হাদীস: [কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে দোয়া করা প্রসঙ্গে]
হযরত সালমান (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কিছু লোক হাত তুলে আল্লাহ তাআলার কাছে চায় তখন আল্লাহ তাআলার কাছে (তাদের) হক হয়ে যায় যে, আল্লাহ তাআলা তাদের হাতে তাদের চাওয়ার জিনিস দান করেন। [মুজামুল কাবীর লিত ত্ববরানী ৬০১৯]
মুনাজাতের ব্যাপারে ইমামগণের বাণী:
ফরজ নামাজের পর মুনাজাত করা সুন্নাত। এটা পূর্বাপর সকল মহান ব্যক্তিদের নিকট নির্দ্বিধায় স্বীকৃত। এমনকি আহলে হাদীস ও গায়রে মুকাল্লিদ আলেমদের নিকটও সুন্নাত। যেমন,
১. হাফেজ আব্দুল্লাহ রোপড়ী বলেন, ‘ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করার যে প্রচলন রয়েছে তা সঠিক।’ [ফাতাওয়ায়ে আহলে হাদীস ২/১৯০]
২. মিয়া নজীর হুসাইন দেহলভী বলেন, ‘চিন্তাশীল ব্যক্তিমাত্রই জানেন যে, ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করা জায়েয ও মুস্তাহাব। যায়েদ (যিনি এই মুনাজাতকে বিদআত বলেন সে) ভুল বলেন।’ [ফাতাওয়ায়ে নাজীরিয়াহ ১/৫৬৬]
৩. মাওলানা ছানাউল্লাহ আমৃতসরী বলেন, ‘কোন কোন রেওয়ায়েতে নামাযের পর হাত তুলে মুনাজাত করার কথা রয়েছে।’ [ফাতাওয়ায়ে ছানাইয়্যাহ-১/৫২৭]
অতএব, আদিকাল থেকে প্রচলিত একটি সুন্নাত ত্বরিকার বিষয়ে অহেতুক প্রশ্ন উত্থাপন করে মু’মীন পরহেজগার বান্দাদের ঈমান আমলের ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আল্লাহ্‌ আমাদের ঈমান-আমলকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।